শিবচর উপজেলার কাঠালবাড়ি ইউনিয়নের কাওয়ালীপাড়া মৌজায় বিক্রি হয়ে যাওয়া জমির ক্ষতিপূরণ তুলেছেন ভুয়া দলিলপত্রধারীরা। অথচ প্রকৃত মালিক ছিলেন সম্পূর্ণ অজ্ঞাত, বঞ্চিত ও নির্বাক।
বিআরএস খতিয়ান নম্বর ২৬৭ ও ২৬৮-এর অধীনে চারটি দাগভুক্ত জমির প্রকৃত মালিক আবু কালাম খান। তিনি প্রায় ৩১ বছর আগে মজিদ ঢালীর কাছ থেকে দলিলমূলে জমিটি খরিদ করেন। মজিদ ঢালী এই জমি বিক্রির পর দীর্ঘদিন এই জমির সাথে তার কোনো আর্থিক বা দখলসত্ত্ব নেই। কিন্তু সম্প্রতি জানা গেছে, মজিদ ঢালির ওয়ারিশগণ পদ্মা সেতুর জন্য অধিগ্রহণকৃত সেই জমির বিপরীতে সরকারের দেওয়া মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ উত্তোলন করা হয়েছে—ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে, পরিচয় গোপন রেখে, প্রতারণার আশ্রয়ে। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন: নুরজাহান বেগম, শাজাহান ঢালী, তারা মিয়া, আমির হোসেন, রাজা মিয়া,রাজিয়া বেগম, রাশিদা বেগম, মাকসুদা বেগম, হাসি বেগম, কমলা বেগম এবং সুজন মিয়া। তারা সমন্বিতভাবে একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্রের মতো কাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই চক্রের মূল হোতা সিরাজ ফকির। তিনি বিভিন্ন ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে বিপুল পরিমাণে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এই টাকা দিয়ে তিনি ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। অনিয়মের কারণে তিনি জেল খেটেছেন। তবু থেমে নেই তার অপরাধচক্র। স্থানীয়দের দাবি, সিরাজ ফকির চক্রের কাছে অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন। আর তিনি প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। স্থানীয়রা দুর্নীতি দমন কমিশনের সাহায্য কামনা করেছেন।
প্রকৃত মালিক আবু কালাম খান বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। তিনি জেলা প্রশাসকের বরাবর একটি লিখিত আবেদন দাখিল করেছেন। আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, “এই জমির মালিক আমার পিতা। পৈত্রিক সূত্রে মালিক আমরা।
অথচ আজ দেখি, আমার জমির পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধীরা সরকারি অর্থ তুলে নিয়েছে। আমি বিচার ও ক্ষতিপূরণ চাই।”
জেলা প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আবেদনের ভিত্তিতে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছে প্রশাসন।
এদিকে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। অনেকেই বলছেন, “এভাবে একদিকে প্রকৃত মালিক বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে জাতীয় প্রকল্পের ক্ষতিপূরণের টাকা জালিয়াতদের পকেটে যাচ্ছে—এটা শুধু অন্যায় নয়, রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”
এই ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত ও প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।